সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১
পাটকেলঘাটায় মাচায় সবজি চাষ করে সফল চাষিরা
নাজমুল হক, পাটকেলঘাটা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি: পাটকেলঘাটায় মাচান সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন ঘের চাষিরা। পাটকেলঘাটার শাকদাহ, তৈলকূপি, বাইগুনি, মিঠাবাড়ি, নগরঘাটা, আসাননগর, ভৈরবনগর, কাপাশডাঙ্গা, বড়বিলা, সরুলিয়া, সারসাসহ আশেপাশে মাছের ঘেরগুলোতে মাছ চাষের পাশাপাশি সবজি চাষ করে ঘের মালিকরা অধিক লাভবান হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায় এসব এলাকার ঘের মালিকরা ঘেরের ভেড়ীতে কুমড়া, লাউ, ঝিঙে, বরবুটি, উচ্ছে, ঢ্যাঁড়শ, খিরায়, পুঁইশাক, কুশি, মানকচু ইত্যাদি লাগিয়ে সবজি চাষ করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে সবজি বাজারজাত করে দেশের কাচা মালের ঘাটতি অনেকটা পূরণ করছে। এতে এক দিকে যেমন তাদের নিজে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে তেমনি দেশের সবজির চাহিদা মেটানোর ফলে সবুজ বিপ্লব ঘটাচ্ছে এ চাষিরা। এসব সবজি বিক্রি করার জন্য এখন আর পরিবহনে করে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না কৃষকদের। এক শ্রেণির কাচা মালের ব্যবসায়ীরা ঘেরে ঘেরে যেয়ে তারা এ সবজি ক্রয় করে বাজারজাত করছে। এতে ঘের মালিকদের সময় ও পরি বহন খরচ যেমন হ্রাস পাচ্ছে তেমনি পাশাপাশি কিছু বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। পাটকেলটার ভৈরবনগর মোড়ে প্রতিদিন আড়তদাররা এসে পিকআপে করে কম মূল্যে সবজি ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছে। মিঠাবাড়ী গ্রামের এক আড়তদার নুরুল ইসলাম গাজী, মিজানুর রহমান ও আমজাদ হোসেন জানান প্রতিদিন এই মোড় থেকে ৪০-৫০ জন ঘের চাষীর কাছ থেকে দেড়-২শ ক্যারেট সবজি ক্রয় করি যার মধ্যে সাত আটশ পিচ কুমড়ার জালি, ৮-৯শ পিচ লাউ ২-৩শ কেজি শশা, দুই-আড়াইশ কেজি করল্লা, ১-১৫০শ কেজি ঝিঙ্গে, ৩-৪শ কেজি ভেন্ডি ক্রয় করি। এর মধ্যে কিছু কিছু স্থানীয় মৌলভী বাজারে ও অধিকাংশ দেশের পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ও চট্টগ্রামে বাজারজাত করি। চাষীদের কাছ থেকে লাউ প্রতি পিচ ১৫-২০ টাকা ক্রয় করে ২৫-৩০ টাকা বিক্রি করি। শশা কেজি প্রতি ১৬-১৮ টাকা ক্রয় করে ২৫-৩০ টাকা, বরবুটি ১৮-২০ টাকায় ক্রয় করে ২৫-৩০ টাকা, ভেন্ডি ১৮-২০ টাকা কিনে ২৮-৩০ টাকা, কুমড়ার জালি ১০ টাকায় ক্রয় করে ২০ টাকায়, ঝিঙ্গে ১০-১৫ টাকায় কিনে ২০-২৫ টাকায়, করল্লা/উচ্ছে ২৫-৩০ টাকায় ক্রয় করে ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি করি। পাটকেলঘাটা শাকদাহ গ্রামের মাছ চাষি মোতালেব সরদার শাকদাহ বিলে ৩৫ বিঘার একটি ঘেরে বিভিন্ন প্রকার সাদা মাছ চাষ করেন। গত কয়েক বছর ওই ঘেরে মাছের পাশাপাশি ঘেরের ভেড়িতে নানা ধরনের সবজি চাষ করছেন। ফলে বছরে লক্ষাধিক টাকা সবজি বিক্রি হয়। এবছর এ সবজি চাষ করার জন্য বাশ, খুটি, সুতা ও পারিশ্রমিক বাবদ ৬০ হাজার টাকা খরচ করে গত মাসেই তার আসল টাকা উঠে গিয়েছে। এবং এ মৌসুমে সবজি বিক্রি করে কম পক্ষে ২ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা লাভ পাবেন বলে তিনি আশা করছেন। তিনি আরো বলেন, তার দেখাদেখি এলাকার অনেকেই সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এবং ঘেরের ভেড়িতে কুল চাষ করে ঘের মালিকরা লক্ষ-লক্ষ টাকা আয় করছে বলে তিনি জানান। এবছর বৃষ্টি কম হওয়ায় ঘেরে মাছ চাষে ব্যাপক সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক ঘেরে মাছে ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে অধিকাংশ ঘের মালিকরা ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু ঘেরের ভেড়ীতে সবজি চাষ করায় কিছুটা লাভের মুখ দেখছে ঘের মালিকরা। এ বিষয়ে কথা হয় মিঠবাড়ী গ্রামের ঘের চাষি আবুল হোসেনের সাথে। তিনি বলেন দীর্ঘদিন মাছ চাষ করে মাছে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় লাভবান হতে না পরলেও উপজেলার কৃষি কর্মকতার পরামর্শে ঘেরের ভিড়ীতে সবজি চাষ করে লাভের মুখ দেখছি। এক বিঘা জমির মৎস ঘেরের ভেড়ীতে সবজি চাষ করতে খরচ হয় প্রায় ৩ হাজার টাকা। কিন্তু শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন এই ৩ মাসে একটি ১ বিঘা ঘেরের ভেড়ীতে সবজি চাষ করে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা মুনাফা অর্জন করা যায়। এ বিষয়ে তালা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাজিরা খাতুন জানান, আধুনিক পদ্ধতিতে মৎস্য ঘেরে সবজি চাষ করে চাষিরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি ঘেরের লিজের টাকাও পরিশোধ করতে পারছে। তাছাড়া এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করতে তেমন বেশি খরচ না হলেও এ এলাকার চাষিরা কৃষি বিপ্লবে অগ্রণী ভুমিকা পালন করছে।
8,567,728 total views, 6,433 views today |
|
|
|